নতুন গিগ তৈরির পর ইম্প্রেশন ও ক্লিক কম থাকে, আবার যখন কোন কাজ ডেলিভারির পর একটা খারাপ রিভিউ আসে বা বায়ার হিডেন রিভিউ খারাপ দেয় তখনও গিগ র্যাঙ্ক হারায় এবং ইম্প্রেশন ও ক্লিক কমে যায়। উভয় অবস্থাতেই প্রয়োজন গিগ মার্কেটিং, যাতে মার্কেটপ্লেস এর বাইরের বায়াররাও আমাদের সার্ভিস সম্পর্কে জানতে পারে এবং প্রয়োজনে অর্ডার করতে পারে। আর বাইরে থেকে যদি কোন বায়ার এসে অর্ডার করে তাহলে যেমন সেল ও পাচ্ছেন আবার আপনার গিগ র্যাঙ্ক ও উন্নতি করে। অতএব ফাইভারে কাজ করতে হলে গিগ মার্কেটিং অতি গুরত্বপুর্ন একটা কাজ এবং এটা আপনাকে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হবে যতদিন না পর্যন্ত আপনি কাজের চাপে ঠিকমত ঘুমাতে না পারেন।
এখন গিগ মার্কেটিং বলতে আমরা কি বুঝি আর কি করি আর আসলে কি করা উচিত? প্রথমেই দেখা যাক আমরা কি করি।
গত পরশু দিনও FOB গ্রুপ এর একটা পোষ্ট চোখে পরল ফাইভার এর কোন একটা বিষয় এর হেল্প চাওয়া নিয়ে, সেখানে এক ভদ্রলোক কমেন্ট করেছে তার MLM বিজনেস টাইপ এর কোন একটা প্রোডাক্ট বা অফার নিয়ে। পোষ্ট এর টপিক এর সাথে ঐ ভদ্রলোক এর কমেন্ট এর কোন সম্পর্কই নাই, তবু সে কমেন্টে অফার করছে এই ভেবে যে সে মার্কেটিং করছে। আর গতকাল আরেক ভদ্রলোক কে দেখলাম কয়েকটা পোষ্ট এর নিচে একই কমেন্ট করছে “পেওনিয়ার এর যেকোন সাহায্যের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করতে” পোষ্ট যাই হোক তারা মনে করছে অফার করতে পারলেই মার্কেটিং হয়ে গেল।
আপনাদের নজরেও হয়ত পরে থাকবে যে কেউ কেউ নতুন গিগ তৈরির পর ফাইভার গ্রূপে এসে তাদের গিগ শেয়ার করছে, আর কিছু গ্রুপ ই আছে যেখানে গিগ এর ফেভারিট এক্সচেঞ্জ করা হয় এবং গিগ প্রোমোট করা হয়। আমরা কেউ কেউ ইন্সটাগ্রামে ও টুইটারে গিগ শেয়ার এর সময় ট্রেন্ডিং হ্যাসট্যাগ গুলো ব্যাবহার করি যাতে বেশি মানুষ আমাদের গিগ দেখে, টপিক যাই হোক আমরা মনে করি যত বেশি শেয়ার করতে পারব তত মার্কেটিং হবে।
উপরের যেই উদাহরন গুলো দিলাম এগুলো কি আদৌ মার্কেটিং? কখনোই না, এগুলো হচ্ছে স্প্যামিং। এভাবে হয়ত আপনার গিগ টা শেয়ার হবে কিন্তু লাভ কিছুই হবেনা, হয়ত এদের মধ্যে কয়েকজন ক্লিক করতে পারে কিন্তু দিন শেষে তারা কাষ্টমারে কনভার্ট হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। কারন আপনি এমন কিছু মানুষকে আপনার সার্ভিস অফার করেছেন যাদের এই ব্যাপারে কোন ইন্টারেষ্ট ই নাই। যখন আমরা নিজের প্রোফাইলে বা গ্রুপ এ গিগ শেয়ার করি তখন তাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যার আমার গিগ টা দরকার? যদি না হয় তাহলে লাভ টা কি? যেখানে সেখানে গিগ শেয়ার করে বরং আমরা মানুষ কে বিরক্ত করে থাকি। আমরা মনে করি শেয়ার মানেই মার্কেটিং।
তাহলে কি করা উচিত?
মার্কেটিং অনেক বড় একটা ব্যাপার, এর জন্য আপনাকে প্ল্যান করে আগাতে হবে। প্রথমে দেখতে হবে আপনার সার্ভিস এর টার্গেট অডিয়েন্স কারা? তাদের কোথায় বেশি পাওয়া যায়? সেখানে আপনার অবস্থান কেমন?
ধরা যাক ইকমার্স বিজনেস লোগো ডিজাইন এর ওপর আপনার একটা গিগ আছে, তাহলে আপনার সম্ভ্যাব্য ক্রেতা হচ্ছে যারা অনলাইনে প্রোডাক্ট সেল করে। এখন তাদের কে একসাথে পাওয়ার সহজ উপায় হলো ফেসবুক গ্রুপ, খুজলে হয়ত এমন অনেক গ্রুপ পাবেন যেখানে ইকমার্স বিজনেস নিয়ে কথাবার্তা হয়, অথবা এমন কিছু গ্রুপ খুজে বের করতে হবে যেখানে আপনার অডিয়েন্স এর ইন্টারেষ্ট আছে। যেমন আপনি যদি কোন কুরিয়ার সার্ভিস গ্রুপ এ যান তাহলে নিশ্চিত সেখানে সব ইকমার্স ব্যাবসায়িদের পাবেন, আর এরা সবাই আপনার সম্ভ্যাব্য ক্রেতা।
এখন এই গ্রুপগুলো পাওয়ার পর আপনি যদি সেখানে গিয়ে আপনার গিগ টা শেয়ার করে আসেন তাহলে আপনি আবারো স্প্যামিং করছেন। এমনকি হয়ত সেই গ্রুপ থেকে আপনার পোষ্ট টা এপ্রুভ নাও করতে পারে।
তাহলে উপায় টা কি?
এই সবকিছু করার আগে নিজের প্রোফাইল টা সাজান, নিজের আসল নাম ব্যাবহার করুন, সুন্দর একটা ছবি ব্যাবহার করুন যেখানে আপনাকে কনফিডেন্ট মনে হয়। নিজের প্রোফাইলে আপনার কিছু কাজের গল্প তুলে ধরুন। কেউ আপনার প্রোফাইলে আসলে যেন মনে করে ইনি অমুক ব্যাপারে পারদর্শি। এবার আপনি সেই গ্রুপ গুলো নিয়ে ভাবুন। আপনি হয়ত একটা পোষ্ট লিখতে পারেন যে একটা ইকমার্স বিজনেস গ্রো করার জন্য কি কি বিষয় জরুরি, সেখানে কয়েকটা লাইন থাকতে পারে যে একটা মিনিংফুল লোগো কতটা গুরুত্বপুর্ন। পোষ্ট এর শেষে আপনার আপনার পরিচয় বা আপনি যে লোগো ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন তা এক লাইনে লিখতে পারেন, পুরো পোষ্ট এ এই একলাইন ই হবে মার্কেটিং।
তাহলে গ্রুপ থেকেও আপনার পোষ্ট এপ্রুভ হবে, টার্গেট অডিয়েন্স ও আপনার সাথে কানেক্ট হবে। তারা নিয়মিত আপনার পোষ্ট গুলো দেখবে আর কেউ কেউ আপনাকে মেসেজ করবে, তখন তাদের চাহিদা অনুযায়ী আপনি জানাতে পারেন যে কিভাবে আপনি তাদের হেল্প করতে পারেন। লোকাল হলে ডিরেক্ট কথা বলে ডিল ফাইনাল করতে পারেন আর বাইরের হলে তখন ফাইভার এর মাধ্যমে অর্ডার নিতে পারেন।
এই উদাহরন টা ছিলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের, আপনার গিগ এর ধরন অনুযায়ী টার্গেট অডিয়েন্স ভিন্ন হবে এবং প্লাটফর্ম ও ভিন্ন হতে পারে। এটা ছিল একেবারেই একটা ব্যাসিক ধারনা, আপনার গিগ এর ধরন অনুযায়ী একটা লং টার্ম প্ল্যান করে এগোতে হবে ও নিয়মিত এই প্র্যাক্টিস চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিটা প্লাটফর্ম এর ধরন অনুযায়ী ভিন্ন প্ল্যান থাকতে হবে। বায়ার কে সরাসরি সার্ভিস অফার না করে প্রথমে তাকে বোঝাতে হবে এটা কেন আপনার জন্য গুরুত্বপুর্ন, তাহলে সে নিজেই আপনাকে মেসেজ করবে হেল্প নেওয়ার জন্য। শুধু মাত্র ফেসবুকে মার্কেটিং এর ওপর ই কয়েকটা আর্টিকেল লেখা যায়, তাই বুঝতেই পারছেন এক আর্টিকেলে সব লিখা সম্ভব না। তাই আপনাদের আরো স্টাডি করতে হবে এবং নিয়মিত করে যেতে হবে।
আশা করি গিগ মার্কেটিং vs স্প্যামিং সম্পর্কে একটা ধারনা পেয়েছেন, এবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন আপনি এতদিন কোনটা করেছেন আর আসলে কোনটা করা উচিত।
সবার মতামত আশা করছি।
ধন্যবাদ,
– মোঃ মাসুম